দোয়া বা প্রার্থনা হলো আল্লাহর সাথে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপনের একটি মাধ্যম। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা সরাসরি আল্লাহর কাছে চাওয়ার সুযোগ দেয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,"দোয়া হল ইবাদতের মূল।"
(তিরমিজি, ৩২৭১) দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কিছু শর্ত ও আদব রয়েছে।
আরও পড়ুন : গালাগালি পরিণতি শাস্তি
দোয়া কবুলের জন্য কিছু অপরিহার্য শর্ত রয়েছে। এগুলো পালন করলে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় এবং দোয়া দ্রুত কবুল হয়। দোয়া করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। রিয়া (লোক দেখানো ইবাদত) থেকে দূরে থাকতে হবে। "তাদেরকে এছাড়া কোনো হুকুম দেওয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে।"(সুরা বাইয়্যিনাহ, ৯৮:৫)
আরও পড়ুন : রব্বি আন্নি মাগলুবুন ফানতাসির
হালাল উপার্জন থেকে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাসূল (সা.) বলেছেন, "এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় হাত উঠিয়ে আকাশের দিকে প্রার্থনা করে, অথচ তার খাবার, পানীয় ও পোশাক হারাম। এমন ব্যক্তির দোয়া কিভাবে কবুল হবে?"(মুসলিম, ১০১৫)
আরও পড়ুন : মুখে ঘা হলে করণীয়
গুনাহ দোয়া কবুলের পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাই দোয়ার আগে তাওবা করা জরুরি।"হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো—খাঁটি তাওবা" (সুরা তাহরিম, ৬৬:৮)। এছাড়া কিছু বিশেষ সময়ে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ সময়গুলোতে বেশি বেশি দোয়া করা উচিত।
আরও পড়ুন : আর্থিক সচ্ছলতা ও রিজিক বৃদ্ধির দোয়া
রাসূল (সা.) বলেছেন,রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, 'কে আছো যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব?(বুখারি, ১১৪৫) আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। (তিরমিজি, ২১২) জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, তাই দেওয়া হয় (বুখারি, ৮৯৫)। বৃষ্টি বরকতের সময়, এ সময় দোয়া কবুল হয়। (আবু দাউদ, ২৫৪০) সিজদায় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে, তাই এ সময় দোয়া করা উত্তম। (মুসলিম, ৪৮২)
আরও পড়ুন : মুখে ঘা হলে করণীয়
কিছু স্থানে দোয়া করলে তা দ্রুত কবুল হয়। মসজিদুল হারাম (কাবা শরিফ) মক্কা ও মদিনার মসজিদে দোয়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন,"আমার মসজিদে এক রাকাত নামাজ অন্য মসজিদের চেয়ে হাজার গুণ উত্তম।(বুখারি, ১১৯০)
আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ দিয়ে শুরু করা,দোয়ার শুরুত,"আলহামদুলিল্লাহ" ও দরুদ শরিফ,পড়া উত্তম। তড়িঘড়ি করে দোয়া ছেড়ে না দেওয়া। রাসূল (সা.) বলেছেন, "তোমাদের কেউ যখন দোয়া করে, তখন সে যেন নিশ্চিন্তে দোয়া করে এবং বলে, 'হে আল্লাহ! আপনি যদি চান, তাহলে আমাকে দান করুন।'"(বুখারি, ৬৩৩৮)
কিছু বিশেষ দোয়া রয়েছে, যা আল্লাহ দ্রুত কবুল করেন। যেমন,পিতামাতার দোয়া, সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া সরাসরি কবুল হয়। (ইবনে মাজাহ, ৩৮৬২) মুসাফিরের দোয়া অর্থাৎ যাত্রীর দোয়া কবুল হয়। (তিরমিজি, ৩৪৪৬) রোজাদারের দোয়া,রোজাদারের দোয়া ইফতারের সময় কবুল হয়। (ইবনে মাজাহ, ১৭৫৩)
রাসূল (সা.) বলেছেন,"কোনো মুসলিম এমন দোয়া করে না, যাতে গুনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছেদের কথা না থাকে; আল্লাহ তাকে তিনটির একটি দেন হয় তাকে তা দিয়ে দেন, নয়তো কোনো বিপদ দূর করেন, অথবা পরকালে সাওয়াব বাড়িয়ে দেন।"(মুসনাদে আহমাদ, ১০৮৩২)
দোয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত
1. দোয়ার আগে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া।
2. কিবলামুখী হয়ে হাত উঠানো।
3. দোয়ায় কাঁদা।
4. দোয়ার মাঝে "ইয়া আল্লাহ" বলা।
দোয়া হলো আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। এর জন্য প্রয়োজন ইখলাস, হালাল রুজি ও উত্তম সময়ের সন্ধান। দোয়া কবুলের নিশ্চয়তা আছে, তবে আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল্লাহ চান, বান্দা বেশি বেশি দোয়া করুক। তাই প্রতিদিনের জীবনে দোয়াকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
0 মন্তব্যসমূহ