Comment

রিজিক বৃদ্ধি ও আর্থিক সচ্ছলতার দোয়া

আর্থিক সচলতা ও রিজিক বৃদ্ধি প্রতিটি মানুষের কাম্য। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে হালাল উপার্জন ও দোয়ার মাধ্যমে আর্থিক সংকট দূর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর্থিক সচলতার জন্য কিছু বিশেষ দোয়া ও আমল রয়েছে, যা নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহর রহমতে আর্থিক সচ্চলতা রিজিক বৃদ্ধি পায়, দারিদ্র্য দূর হয় এবং জীবনে সুখ-শান্তি আসে।


আরও পড়ুন : মুখে ঘা হলে করণীয় ও ঔষধ


সূরা ওয়াকিয়াহ পড়াকে রিজিক বৃদ্ধির বিশেষ আমল হিসেবে গণ্য করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতিরাতে সূরা ওয়াকিয়াহ পাঠ করবে, তাকে কখনো দারিদ্র্য স্পর্শ করবে না।”এই সূরাটি নিয়মিত তিলাওয়াত করলে আল্লাহ রিজিকে বরকত দেন এবং আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি দেন।


প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর ১০ বার সূরা ফাতিহা ও ১০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করলে রিজিক বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, “যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়বে, তা তাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে। হজরত নুহ (আ.) এর উম্মতেরা যখন অনাবৃষ্টি ও দারিদ্র্যে পড়েন, তখন তিনি তাদেরকে ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করতে বলেছিলেন।


আরও পড়ুন : দোয়া কবুলের পদ্ধতি


আল্লাহ বলেন, “অতঃপর আমি বললাম, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন।” (সূরা নুহ: ১০-১২)। নিয়মিত *“আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম” পড়লে আল্লাহ রিজিক বাড়িয়ে দেন।


পেটে ব্যথা বা বিপদে পড়ে হজরত ইউনুস (আ.) এই দোয়া পাঠ করেছিলেন,“লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জালিমিন। অর্থ:“হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তুমি পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছি।”(সূরা আম্বিয়া: ৮৭) এই দোয়া পড়লে আল্লাহ বিপদ দূর করেন এবং রিজিক বাড়িয়ে দেন।


রাসুল (সা.) বলেছেন,“যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ পড়বে, তার গুনাহসমূহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও মাফ করে দেওয়া হবে এবং তার রিজিকে বরকত দেওয়া হবে।”(বুখারি ও মুসলিম)


সদকা রিজিক বাড়ানোর অন্যতম উপায়। রাসুল (সা.) বলেছেন,“সদকা রিজিক বাড়িয়ে দেয় এবং বিপদ দূর করে”(তিরমিজি) নিয়মিত গরিব-দুঃখী, আত্মীয়-স্বজন ও মিসকিনদের সাহায্য করলে আল্লাহ ধন-সম্পদে বরকত দেন। নামাজ আদায়কারীর রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহ নিজেই করেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,“আমি তোমাদের রিজিক দেব, তোমরা শুধু আমার ইবাদত করো।”(সূরা ত্বাহা: ১৩২)


হালাল উপার্জন রিজিকের বরকত বাড়ায়। হারাম উপার্জনে বরকত থাকে না। রাসুল (সা.) বলেছেন,“হালাল উপার্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।” যে ব্যক্তি আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখে, আল্লাহ তার রিজিক বাড়িয়ে দেন। হাদিসে এসেছে,“যে ব্যক্তি চায় যে, তার রিজিক বৃদ্ধি পাক এবং আয়ু দীর্ঘ হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।”(বুখারি)


আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখলে তিনি অপ্রত্যাশিত উপায়ে রিজিক দেন। কুরআনে বলা হয়েছে,“যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।”(সূরা তালাক: ৩) তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন,“প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বান্দাদের ডেকে বলেন, কে আছো যে আমাকে ডাকবে, আমি তাকে দেব।


জুমার দিনে বিশেষ একটি সময়ে দোয়া কবুল হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, "জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছু চাইলে আল্লাহ তাকে তা দেন।” (বুখারি) সিজদা হলো বান্দার আল্লাহর সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থান। এই সময় দোয়া করলে তা দ্রুত কবুল হয়।


আর্থিক সচলতার জন্য দোয়া ও আমল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত, ইস্তিগফার, সদকা ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়। হালাল রুজি অর্জন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখলে জীবনে অর্থকষ্ট দূর হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আর্থিক সচলতা দান করুন এবং হালাল রিজিকে বরকত দিন। আমিন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ