Comment

গালাগালির পরিণতি: শরিয়ত, সমাজ ও আখিরাতের দৃষ্টিভঙ্গি

কথার শক্তি ও ভাষার পবিত্রতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গালাগালি বা অশালীন ভাষা ব্যবহার ইসলামে নিষিদ্ধ এবং এটি গুরুতর পাপ হিসেবে বিবেচিত। কাুকে গালিগালাজ করলে এর শাস্তি ভয়ংকর হবে, এই পাপ আপনার ইমান নিয়ে প্রশ্ন তুলে। মুমিন ব্যক্তি কখনো কাউকে গালি দিতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,"মুমিন কখনও গালিগালাজকারী, অভিশাপদাতা বা অশ্লীল ভাষী হয় না।"


আরও পড়ুন : রব্বি আন্নি মাগলুবুন ফানতাসির ফজিলত ও উপকার


গালাগালি বলতে যে কোনো অশালীন, আক্রমণাত্মক বা সম্মানহানিকর ভাষাকে বোঝায়। কারো চরিত্র, বংশ বা পরিবারকে আঘাত করা। আল্লাহর রাসূল (সা.), ফেরেশতা বা অন্য নবীদের অপমান করা। কোনো গোত্র, জাতি বা পেশার মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা।


গালাগালিকে কবিরা গুনাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "তোমরা একে অপরকে দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।"(সুরা হুজুরাত, ৪৯:১১) গালাগালি করলে মানুষের ইমান কমে যায়। রাসূল (সা.) বলেছেন,"গালিগালাজকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।"(বুখারি, হাদিস নং ৬০৫৬)


আরও পড়ুন : ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর লক্ষ্মণ


গালাগালি করলে নেক আমল বিনষ্ট হয়। হাদিসে এসেছে,"যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কাউকে গালি দেয়, তার সদকা ও সিয়ামের সাওয়াব গালি পাওয়া ব্যক্তির কাছে চলে যায়।" (বুখারি)  গালাগালি করা ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, "মানুষ যখন অন্যায়ভাবে কাউকে গালি দেয়, তখন সেই গালি আকাশে উঠে যায়, কিন্তু আসমান-জমিনের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে তা ঐ ব্যক্তির আমলনামায় লেখা হয় যে গালি দিয়েছে।" (ইবনে মাজাহ)


আরও পড়ুন : দোয়া কবুলের পদ্ধতি


গালাগালি পারিবারিক কলহ ও বিবাদ বাড়ায়। স্বামী-স্ত্রী, পিতা-পুত্র বা ভাই-বোনের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করে। যে ব্যক্তি গালাগালি করে, সমাজে তার মর্যাদা কমে যায়। রাসূল (সা.) বলেছেন,"মুমিন কখনও অপবাদ দেয় না, গালি দেয় না এবং অশ্লীল কথা বলে না।"(তিরমিজি) গালাগালির কারণে রাস্তায়, অফিসে বা পরিবারে মারামারি হতে পারে।


গালাগালি থেকে বাঁচার ইসলামী উপায়।

রাসূল (সা.) বলেছেন, "শক্তিশালী সেই ব্যক্তি যে কুস্তিতে অপরকে হারায় না, বরং যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে।" গালি শুনে ধৈর্য্য ধারণ করা মুমিনের গুণ। আল্লাহ বলেন, "যারা রাগ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, আল্লাহ এমন সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেনল।


গালাগালির অভ্যাস ত্যাগ করতে বেশি বেশি দোয়া ও তাওবা করা উচিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জিম্মাদারি নেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদারি নেব। উত্তম কথার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,"মানুষের সাথে নম্রভাবে কথা বলো।"(সুরা ত্বাহা, ২০:৪৪)


ইসলামে গালাগালির জন্য শাস্তি।

- গালাগালিকারী ব্যক্তি জাহান্নামের শাস্তি পেতে পারে।  

- কিয়ামতের দিন তার নেক আমল গালি পাওয়া ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া হবে।


গালাগালিকে জঘন্য অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। এটি ইমান দুর্বল করে, সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে এবং আখিরাতের শাস্তি ডেকে আনে। তাই আমাদের উচিত রাগ নিয়ন্ত্রণ করা, ধৈর্য্য ধারণ করা এবং উত্তম ভাষা ব্যবহার করা। রাসূল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে আমরা একটি পবিত্র ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে পারি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ