Comment

ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ কখন দেখা দিবে

ক্যান্সার একটি জটিল ও জীবনঘাতী রোগ, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শেষ পর্যায়ের ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা দেয়, যা মৃত্যুর আগমন সংকেত দেয়। এই লক্ষণগুলো বোঝা রোগী ও তার পরিবারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।


শেষ পর্যায়ের ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে অত্যন্ত দুর্বলতা দেখা দেয়। রোগী ক্রমাগত শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন এবং সামান্য চলাফেরাতেও ক্লান্তি অনুভব করেন। শারীরিক শক্তি হ্রাস পায়, এবং রোগী প্রায়শই ঘুমানোর চেষ্টা করেন। এটি ঘটে কারণ শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসে।


আরও পড়ুন : জ্বর সর্দি হলে করণীয়


মৃত্যুর কয়েক দিন বা সপ্তাহ আগে রোগীর ক্ষুধা সম্পূর্ণভাবে কমে যায়। এমনকি প্রিয় খাবারও তাদের আকর্ষণ করে না। পানি পান করতেও অনিচ্ছা দেখা দেয়, যা ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে। এই সময়ে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা না করে, বরং রোগীর মুখ স্যাঁতসেঁতে কাপড় দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া বা আইস চিপস দেওয়া যেতে পারে।


আরও পড়ুন : রব্বি আন্নি মাগলুবুন ফানতাসির ফজিলত ও উপকার


শেষ পর্যায়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি অনিয়মিত হয়ে যায়। কিছু রোগীর শ্বাস দ্রুত হয়, আবার কেউ কেউ দীর্ঘ সময় শ্বাস বন্ধ রাখেন (Cheyne-Stokes respiration)। ফুসফুসে তরল জমা বা শ্বাসনালী দুর্বল হয়ে যাওয়ায় শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই সময় অক্সিজেন সাপোর্ট বা বেদনানাশক ওষুধ দেওয়া হতে পারে।


আরও পড়ুন : ইশার নামাজের ফজিলত ও উপকার


মৃত্যুর কাছাকাছি সময়ে রোগী প্রায়ই অচেতন বা অর্ধ-সচেতন অবস্থায় থাকেন। তারা পরিবারের সদস্যদের চিনতে পারেন না বা সময়-স্থান নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভুগতে পারেন। এটি রক্তে টক্সিন জমা বা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবের কারণে হয়ে থাকে। ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে ব্যথা তীব্র হতে পারে, বিশেষ করে যদি টিউমার স্নায়ু বা হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই সময়ে ডাক্তারের পরামর্শে শক্তিশালী ব্যথানাশক দেওয়া হয়।


রোগীর হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে পারে এবং ত্বক ফ্যাকাশে বা নীলচে হয়ে যেতে পারে। এটি রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ার কারণে হয়। শরীরের মূল তাপমাত্রাও ওঠানামা করতে পারে। শেষ মুহূর্তে অনেক রোগী মল-মূত্রের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। কিডনি ও মূত্রাশয়ের কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় এই সমস্যা দেখা দেয়।


আরও পড়ুন : গালাগালির পরিণতি: শরিয়ত, সমাজ ও আখিরাতের দৃষ্টিভঙ্গি


অনেক রোগী মৃত্যুর আগে মৃত আত্মীয়স্বজন বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের স্বপ্ন বা হ্যালুসিনেশন দেখার কথা বলেন। এটি প্রাকৃতিকভাবে ঘটে এবং রোগীকে মানসিক শান্তি দিতে পারে।


ক্যান্সারের ব্যক্তির সাথে পরিবারের করণীয়।

- রোগীকে আরামদায়ক পরিবেশ দেওয়ার চেষ্টা করুন।  

- তাদের সাথে নরম স্বরে কথা বলুন, এমনকি যদি তারা জবাব না দেন।  

- ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক সমর্থন দিন (প্রয়োজনে)।  

- হসপিস কেয়ার বা প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিন।


ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণগুলো বোঝা পরিবার ও পরিচর্যাকারীদের জন্য সহায়ক। এই সময়ে রোগীর শারীরিক ও মানসিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মৃত্যু একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, এবং এই মুহূর্তগুলোকে সম্মান ও মর্যাদার সাথে গ্রহণ করা উচিত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ