Comment

ইশার নামাজের ফজিলত ও উপকারিতা

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ইশার নামাজ শেষ ওয়াক্তের নামাজ হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। রাতের প্রথম প্রহরে আদায় করা এই নামাজের রয়েছে অসাধারণ ফজিলত ও আধ্যাত্মিক উপকারিতা। অনেক মুসলিম ব্যস্ততার কারণে বা অলসতাবশত এই নামাজে অবহেলা করেন, অথচ হাদিসে এ নামাজের বিশেষ মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। ইশার নামাজের ফজিলত, গুরুত্ব এবং এর ব্যক্তিগত ও সমাজিক উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এই নিবন্ধে।



ইশার নামাজ চার রাকাত ফরজ, দুই রাকাত সুন্নত ও তিন রাকাত বিতর সহ মোট নয় রাকাত নামাজ। কুরআন ও হাদিসে এ নামাজের বিশেষ গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,"নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ।"(সূরা নিসা: ১০৩) রাসুলুল্লাহ (সা.) ইশার নামাজের ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,"যদি আমি জানতাম যে আমার উম্মতের উপর এটা কষ্টকর হবে না, তাহলে আমি ইশার নামাজ অর্ধরাতে আদায় করার আদেশ দিতাম।" (বুখারী: ৫৭৪)  



ইশার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে রাতের ইবাদতের সূচনা হয়। এই নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি সহজে তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল ইবাদতের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। রাসুল (সা.) বলেছেন,"ইশার নামাজ জামাতে আদায়কারীর সওয়াব অর্ধরাত পর্যন্ত নামাজ আদায়ের সমতুল্য।"(মুসলিম: ৬৫৬)  



ইশার নামাজ মুনাফিকদের থেকে মুমিনদের পার্থক্যকারী। রাসুল (সা.) বলেছেন,"মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কষ্টকর নামাজ হলো ইশা ও ফজরের নামাজ। যদি তারা জানত এ দুটি নামাজে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়েও এসে নামাজ আদায় করত।"(বুখারী: ৬৫৭)  


যারা অন্ধকার রাতেও ইশার নামাজ আদায় করে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাদের জন্য আলোর ব্যবস্থা করবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন,

"যারা অন্ধকারে মসজিদে যায়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের পূর্ণ নুর দান করবেন।"(তিরমিজি: ২২৩)  



ইশার নামাজ আদায় করলে আগের ছোট গুনাহগুলো মাফ হয়ে যায়। যেমন রাসুল (সা.) বলেছেন,"পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে অন্য জুমা এবং এক রমজান থেকে অন্য রমজান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়, যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়।" (মুসলিম: ২৩৩)  


ইশার নামাজের রুকু-সিজদা শরীরের জন্য একটি উত্তম ব্যায়াম। বিশেষ করে রাতের বেলা হালকা শারীরিক ক্রিয়া রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং হজমশক্তি বাড়ায়। দিনের শেষে আল্লাহর স্মরণে দাঁড়ানো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নামাজ আদায়কারীদের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কম থাকে।


যে ব্যক্তি ইশার নামাজ আদায় করে, তার রাতের সময় বরকতময় হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন,"আল্লাহ তাআলা ইশার নামাজ আদায়কারীর রিজিকে বরকত দেন।"(ইবনে মাজাহ: ৭৯৬) যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ইশার নামাজ ত্যাগ করে, তাদের ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন,"যে ব্যক্তি ইশার নামাজের জামাত ছেড়ে দেয়, সে যেন নিজের ঘর জ্বালিয়ে দিল।"(মুসনাদে আহমদ: ২২৪)  


ইশার নামাজ শুধু একটি ফরজ ইবাদতই নয়, বরং এটি মুমিনের জীবনে আধ্যাত্মিক, শারীরিক ও সামাজিক সুবিধা বয়ে আনে। এই নামাজের ফজিলত অপরিসীম এবং এটি ত্যাগ করার পরিণতি ভয়াবহ। তাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত যথাসময়ে ইশার নামাজ আদায় করা এবং এর ফজিলত অর্জনের চেষ্টা করা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ