
চুল পড়া নারীদের একটি সাধারণ সমস্যা, যা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রভাব ফেলে। দিনে ৫০-১০০ টি চুল পড়া স্বাভাবিক, তবে এর চেয়ে বেশি পড়লে তা উদ্বেগের বিষয়। নারীদের চুল পড়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন হরমোনের পরিবর্তন, পুষ্টির অভাব, মানসিক চাপ বা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন।
১.হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা।
নারীদের শরীরে হরমোনের তারতম্য চুল পড়ার একটি বড় কারণ। বিশেষ করে গর্ভাবস্থা, প্রসব পরবর্তী সময়, মেনোপজ বা থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে চুল পড়া বাড়ে। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে বা টেস্টোস্টেরন বেড়ে গেলে চুল পাতলা হয়ে যায়।
সমাধান।
হরমোন টেস্ট করিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রাকৃতিক উপায়ে হরমোন ব্যালান্স করতে সয়াবিন, ফ্ল্যাক্সসিড ও সবুজ শাকসবজি খান।
আরও পড়ুন : মায়ের দোয়া সন্তানের ভাগ্য পরিবর্তন করে
২.পুষ্টির অভাব
আয়রন, জিংক, ভিটামিন ডি, বায়োটিন ও প্রোটিনের অভাবে চুল দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে আয়রন (অ্যানিমিয়া) নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, যা চুলের গোড়া দুর্বল করে।
সমাধান।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক, মাংস, ডাল ও বাদাম খান। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার (লেবু, আমলকী) আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন : যোহরের নামাজের ফজিলত
৩.মানসিক চাপ ও উদ্বেগ।
দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস টেলোজেন এফ্লুভিয়াম (Telogen Effluvium) নামক অবস্থা সৃষ্টি করে, যেখানে চুল দ্রুত পড়তে শুরু করে।
সমাধান।
মেডিটেশন, যোগব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম চাপ কমাতে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক তেল (ল্যাভেন্ডার, রোজমেরি) ম্যাসাজ করলে চুলের গোড়া শক্ত হয়।
৪.রাসায়নিক পণ্যে চুলের যত্ন।
শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, হেয়ার ডাই বা স্ট্রেটেনিং ক্রিমে ক্ষতিকর কেমিকেল (SLS, প্যারাবেন) থাকলে চুলের ফলিকল নষ্ট হয়।
সমাধান
হারবাল বা অর্গানিক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং (ব্লো ড্রাই, স্ট্রেইটেনার) এড়িয়ে চলুন।
৫.জেনেটিক কারণ
অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া (Androgenetic Alopecia) নামক বংশগত সমস্যা নারীদেরও হতে পারে, যেখানে চুল ধীরে ধীরে পাতলা হয়ে যায়।
সমাধান।
মিনোক্সিডিল (Minoxidil) জাতীয় লোশন ব্যবহার করুন (চিকিৎসকের পরামর্শে)। প্রোটিন ও কলাজেন সমৃদ্ধ ডায়েট ফলিকল মজবুত করে।
আরও পড়ুন : মেধা শক্তি শক্তি স্মরণ শক্তি বাড়ানোর উপায়
৬.ডিহাইড্রেশন।
পানি কম পান করলে স্ক্যাল্প শুষ্ক হয়ে যায়, ফলে চুল ভঙ্গুর ও ঝরে পড়ে।
সমাধান।
দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। নারিকেল তেল বা অ্যালোভেরা জেল হাইড্রেশন বজায় রাখে।
আরও পড়ুন : আসরের নামাজের ফজিলত ও উপকার
৭.স্ক্যাল্প ইনফেকশন বা ড্যান্ড্রাফ।
ফাঙ্গাল ইনফেকশন, সোরিয়াসিস বা একজিমা থাকলে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়ে।
সমাধান
-টি ট্রি অয়েল বা নিমের তেল অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে। ডাক্তারের পরামর্শে মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
৮.ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বিরোধী গর্ভনিরোধক বড়ি, ব্লাড প্রেসারের ওষুধ বা কেমোথেরাপির ফলে চুল পড়তে পারে।
সমাধান।
চিকিৎসকের সাথে বিকল্প ওষুধ নিয়ে আলোচনা করুন।
ভিটামিন ই ও ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্ট নিন।
৯.অতিরিক্ত টাইট হেয়ারস্টাইল।
ব্রাইড, পনি টেল বা এক্সটেনশন টানার কারণে ট্র্যাকশন অ্যালোপেসিয়া (Traction Alopecia) হতে পারে।
সমাধান.
ঢিলেঢালা হেয়ারস্টাইল করুন।
- সিল্ক বা সাটিন স্কার্ফ ব্যবহারে ঘর্ষণ কমে।
১০.পরিবেশ দূষণ
ধুলোবালি, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ও দূষিত বাতাস চুলের কেরাটিন নষ্ট করে।
সমাধান।
- বাইরে গেলে স্কার্ফ বা হ্যাট ব্যবহার করুন।
- সপ্তাহে একবার ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট নিন।
চুল পড়া রোধ করতে প্রথমে কারণ চিহ্নিত করুন। পুষ্টিকর খাবার, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ও প্রাকৃতিক যত্ন চুলের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। যদি সমস্যা গুরুতর হয়, তবে ট্রাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হোন। মনে রাখবেন, সুস্থ চুলের জন্য সুস্থ জীবনযাপন জরুরি।
0 মন্তব্যসমূহ