Comment

বৃষ্টি নিয়ে কুরআন ও হাদিসে কি বলা হয়েছে

বৃষ্টি মহান আল্লাহ তায়ালার একটি মহান নিয়ামত। এটি পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ও মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অপরিহার্য। কুরআন ও হাদিসে বৃষ্টিকে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমতার নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই নিবন্ধে বৃষ্টি সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের, এর তাৎপর্য এবং বৃষ্টির জন্য দোয়া ও শুকরিয়া ও আল্লাহর রহমত অপরিহার্য।

আরও পড়ুন : বগুড়ায় শাশুড়ি বউকে হত্যা


পবিত্র কুরআনে বৃষ্টিকে আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একাধিক আয়াতে বৃষ্টির প্রক্রিয়া, এর উপকারিতা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর মহিমা প্রকাশের কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,"তিনিই তোমাদের জন্য আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তা থেকে পান করা যায় এবং তা থেকে উদ্ভিদ হয়, যাতে তোমরা পশুচারণ করো। এর মাধ্যমে তিনি তোমাদের জন্য উৎপন্ন করেন শস্য, যাইতুন, খেজুরগাছ, আঙ্গুর ও সব ধরনের ফল।


আরও পড়ুন : ফজরের নামাজের ফজিলত ও বরকত


নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।" (সুরা নাহল১৬,১০-১১) এই আয়াতে বৃষ্টিকে আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা মানবজাতি ও প্রাণীকুলের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য।


আল্লাহ তাআলা বৃষ্টি সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে তাঁর মহিমার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন,"তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, অতঃপর তাকে পরস্পর সংযুক্ত করেন, তারপর তাকে স্তূপীকৃত করেন; অতঃপর তুমি দেখ যে, তার মাঝ থেকে বারিধারা বের হয়। তিনি আকাশ থেকে পর্বতসমূহের মধ্যে থাকতে শিলাবৃষ্টি বর্ষণ করেন" (সুরা নুর, ২৪:৪৩)


আরও পড়ুন : যোহরের নামাজের ফজিলত ও বরকত


কুরআনে বারবার বৃষ্টিকে মৃত ভূমিকে সজীব করার মাধ্যম হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা আখিরাতে পুনরুত্থানের একটি নিদর্শন,"আর তিনি তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে থেকে তোমাদের দেখান বজ্রপাত, ভয় ও আশার মাধ্যমে এবং তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা দ্বারা মৃত ভূমিকে সজীব করেন। নিশ্চয়ই এতে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।"(সুরা রুম, ৩০:২৪)


নবী (সা.) বৃষ্টি বর্ষিত হলে এই দোয়া পড়তেন,"আল্লাহুম্মা সাইয়্যিবান নাফিআ"অর্থ - হে আল্লাহ! এই বৃষ্টিকে উপকারী বৃষ্টি করুন।তিনি আরও বলতেন,"বৃষ্টি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও অনুগ্রহ।” (মুসলিম, হাদিস নং ৮৯৮)


বৃষ্টি শেষ হলে নবী (সা.) বলতেন,"মুতির্না বিফাদলিল্লাহি ওয়া রাহমাতিহি" আমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত দ্বারা সিক্ত হয়েছি। (বুখারি, হাদিস নং ৮৪৬)


যখন বৃষ্টি অত্যধিক হয়ে যেত, তখন রাসুল (সা.) আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতেন,"আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা, আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াজ জিরাবি ওয়াবুতুনি ওয়াডিরায়াতিল মা'। অর্থ - হে আল্লাহ! আমাদের আশেপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়, মরুভূমি, উপত্যকা ও গাছপালায় বৃষ্টি দিন। (বুখারি, হাদিস নং ৯৬৮)


আরও পড়ুন : আল্লাহর উপর ভরসা রাখার উপায়


১. আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে বৃষ্টি  

প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা আল্লাহর অস্তিত্ব ও ক্ষমতার প্রমাণ। কুরআনে বলা হয়েছে,"নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের আবর্তনে এবং নৌকায় যা সমুদ্রে চলাচল করে মানুষের জন্য উপকারী বস্তুসমূহে এবং আল্লাহ যে পানি বর্ষণ করেন, তা দ্বারা মৃত পৃথিবীকে সজীব করেন। এগুলো বুদ্ধিমানদের জন্য নিদর্শন।"(সুরা বাকারা, ২:১৬৪)


২. বৃষ্টির জন্য কৃতজ্ঞতা  

বৃষ্টি আল্লাহর অনুগ্রহ, তাই এর জন্য শুকরিয়া আদায় করা জরুরি। নবী (সা.) বলেছেন,"যে ব্যক্তি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে না, সে যেন আল্লাহর নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হয়।" (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৯৩২)


৩. বৃষ্টির সময় ইবাদতের ফজিলত  

বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন,"দুই সময়ের দোয়া কখনো ফেরত দেওয়া হয় না— আজানের সময় এবং বৃষ্টির সময়।" (আবু দাউদ, হাদিস নং ২৫৪০) 


বৃষ্টি আল্লাহর অপার রহমতের নিদর্শন। কুরআন ও হাদিসে বৃষ্টিকে আল্লাহর কুদরত, রহমত ও নেয়ামত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আমাদের উচিত বৃষ্টির সময় আল্লাহর দিকে ফিরে আসা, তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং এই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর অসীম ক্ষমতা ও দয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ