ইসলামে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে, যার মধ্যে ফজরের নামাজ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই নামাজ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত পড়া হয়। ফজরের নামাজ শুধু একটি ইবাদতই নয়, বরং এটি মুমিনের দিনের সূচনা আল্লাহর স্মরণে করে তোলে। হাদিস ও কুরআনের আলোকে ফজরের নামাজের ফজিলত অপরিসীম। এই নামাজ আদায়কারীকে আল্লাহ বিশেষ মর্যাদা দান করেন, শয়তান থেকে হিফাজত করেন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে অসংখ্য বরকত দান করেন।
আর পড়ুন : বৃষ্টি নিয়ে কুরআন ও হাদিস
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ফজরের সময়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা করেছেন। সূরা বনি ইসরাইলে আল্লাহ বলেন,"সূর্য ঢলে পড়ার সময় থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত নামায কায়েম করুন এবং ফজরের কোরআন পাঠও। নিশ্চয় ফজরের কোরআন পাঠ মুখোমুখি হয়।।" (সূরা আল-ইসরা ১৭:৭৮)
এই আয়াতে ফজরের নামাজের সময় কুরআন তিলাওয়াতের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফজরের নামাজের সময় ফেরেশতারা উপস্থিত থাকেন এবং মুমিনের ইবাদতের সাক্ষী হন।
আরও পড়ুন : কলকাতায় আ.লীগ প্রসঙ্গে যা বললেন মমতা
ফজরের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস। রাসুলুল্লাহ (সা.) ফজরের নামাজের বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করেছেন। নিম্নে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো।
(ক) জাহান্নাম থেকে মুক্তি,
হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ফজর ও আসরের নামাজ আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এই হাদিসে ফজরের নামাজকে জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
(খ) আল্লাহর বিশেষ হিফাজত।
হজরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করবে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকবে।"অর্থাৎ, ফজরের নামাজ আদায়কারীকে আল্লাহ নিজের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়ে নেন এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে হিফাজত করেন।
(গ) সমগ্র রাত জাগরণের সওয়াব।
হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,"যে ব্যক্তি জামাতের সাথে এশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধরাত পর্যন্ত ইবাদত করল। আর যে ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করল, সে যেন সমগ্র রাত ইবাদত করল। এই হাদিসে ফজরের নামাজের মাধ্যমে সমগ্র রাতের ইবাদতের সওয়াব লাভের কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন : যোহরের নামাজের ফজিলত ও বরকত
ফজরের নামাজ আদায়ের সুন্নত পদ্ধতি।
ফজরের নামাজের ফজিলত লাভ করতে হলে তা সুন্নত অনুযায়ী আদায় করতে হবে। ফজরের নামাজের নিম্নোক্ত সুন্নতগুলো পালন করা উচিত।
১.ঘুম থেকে ওঠে পড়ার দোয়া পড়া।
- "আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।"
২. মিসওয়াক করা।
- রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক করতেন।
৩. সুন্নত নামাজ আদায় করা।
- ফজরের ফরজের আগে ২ রাকাত সুন্নত পড়া।
৪. জামাতে অংশগ্রহণ করা।
- জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত বেশি।
ফজরের নামাজের বরকত।
১. ফজরের নামাজ আদায়কারী আল্লাহর বিশেষ রহমতের আওতায় আসে।
২. ফজরের সময় শয়তান পিছু হটে।
৩. সকাল সকাল জাগরণ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
৪. ফজরের নামাজ রিজিক বৃদ্ধির কারণ।
৫. এটি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম।
ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য সহজ উপায়।
অনেকের জন্য ফজরের নামাজে জাগা কষ্টকর।
রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস করা।
অ্যালার্ম বা নামাজের জন্য অ্যাপ ব্যবহার করা।
ঘুমানোর আগে নিয়ত করা যে ফজরের নামাজ আদায় করব।
পরিবার বা বন্ধুদের সাথে জামাতে নামাজ পড়ার চেষ্টা করা।
ঘুমানোর আগে দোয়া পড়া,
- "বিসমিকা আল্লাহুমma আমুতু ওয়া আহয়া।"
ফজরের নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নেয়ামত। এটি শুধু একটি ফরজ ইবাদতই নয়, বরং এটি মুমিনের ঈমানী শক্তির পরিচয়। যে ব্যক্তি নিয়মিত ফজরের নামাজ আদায় করে, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করেন। তাই আমাদের উচিত ফজরের নামাজের ফজিলত লাভের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা এবং শয়তানের প্ররোচনা থেকে বেঁচে থাকা।
0 মন্তব্যসমূহ