পবিত্র কুরআন মাজীদের পঞ্চম বৃহত্তম সূরা হলো সূরা আল-মায়েদাহ। এটি মদিনায় নাযিল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ সূরাগুলোর মধ্যে একটি। এই সূরার আয়াত সংখ্যা ১২০, এবং এটি মূলত শরিয়াহ, সামাজিক ন্যায়বিচার, ঐক্য ও ইবাদতের বিস্তারিত ভাবে আল্লাহর আদেশ প্রদান করে। সূরা আল-মায়েদাহর ফজিলত, বরকত ও রহমত অপরিসীম। এটি পাঠ করলে মুমিন ব্যক্তি আধ্যাত্মিক শক্তি, আল্লাহর রহমত ও দুনিয়া-আখিরাতের সফলতা লাভ করবে।
আর পড়ুন : সূরা ফাতিহার ফজিলত ও রহমত
সূরা আল-মায়েদাহর ফজিলত বলা সম্পর্কে বলা হয় থাকে সাহাবায়ে কেরাম এই সূরার বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণনা করেছেন। এই সূরা নিয়মিত তিলাওয়াত করলে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার বিশেষ রহমত নাজিল করবেন এবং এটার ফজিলত অতুলনীয়। যে ব্যক্তি মন খারাপ বা দুশ্চিন্তায় ভোগে, সে যদি নিয়মিত সূরা আল-মায়েদাহ তিলাওয়াত করে, তাহলে আল্লাহ তার দুঃখ দূর করে দেন।
ঈমানি বৃদ্ধি করে এবং এই সূরা আল-মায়েদাহতে আল্লাহ তয়ালার প্রতি ঈমান, আমানতদারী ও ন্যায়বিচারের উপর জোর দিয়েছেন। এটি পাঠ করলে ঈমানের দৃঢ়তা বাড়ে। সূরা আল-মায়েদাহর বরকত এই সূরায় এমন অনেক আয়াত রয়েছে, যেগুলো বান্দার জীবনে বরকত বয়ে আনে।
সূরাটির নাম আল-মায়েদাহ (খাবারের মেজ) রাখার পেছনে একটি বিশেষ ঘটনা রয়েছে। হযরত ঈসা (আ.)-এর উম্মতের একটি দল আল্লাহর কাছে আসমানী খাবার চেয়েছিলেন, যা এই সূরায় বর্ণিত হয়েছে (আয়াত ১১২-১১৫)। এটি আল্লাহর অসীম দয়ার নিদর্শন। যে ব্যক্তি এই সূরা পাঠ করবে, আল্লাহ তার রিজিকে বরকত দেবেন।
আর পড়ুন : সূরা বাকারাহ ফজিলত, বরকত ও রহমত
এই সূরা পাঠ করলে পরিবার ও দুনিয়াবী জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। বিশেষ করে পারিবারিক কলহ দূর হয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি ঘটে। বিপদ-আপদ থেকে হিফাজত সূরা আল-মায়েদাহ পাঠ করলে শয়তানের কুমন্ত্রণা ও যাদু-টোনার ক্ষতি থেকে হিফাজত হয়।
এই সূরার প্রতিটি আয়াত আল্লাহর রহমতের ধারা বর্ষণ করে। সূরাটির ৩৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে, অতঃপর যে তওবা করে ও সংশোধন করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। এটি পাঠ করলে গুনাহগার ব্যক্তির জন্য আল্লাহর ক্ষমা ও রহমতের দরিয়া খুলে যায়।
আখিরাতে উচ্চ মর্যাদা রয়েছে, এই সূরার ১১৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ বলবেন, এটা সেই দিন, যে দিন সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যতা উপকৃত করবে। তাদের জন্য রয়েছে এমন সব উদ্যান, যার তলদেশে নহর প্রবহমান। তাতে তারা সর্বদা থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটাই মহা সাফল্য।
সূরা আল-মায়েদাহ কুরআনের একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ সূরা, যা পাঠ করলে ফজিলত, বরকত ও রহমত লাভ করা যায়। এটি ঈমানি শক্তি বৃদ্ধি করে, গুনাহ মাফ করায় এবং দুনিয়া-আখিরাতের সফলতা এনে দেয়। তাই প্রতিদিন এই সূরা তিলাওয়াত করার অভ্যাস গঠন করা উচিত।
আরও পড়ুন : সূরা আল আন-আমের ফজিলত, বরকত ও রহমত
সূরা মায়েদা কুফরী সম্পর্কে ভয়াবহ আয়াত আছে। কুফরী একটি মারাত্মক অপরাধ যা মানুষের ইহকাল ও পরকাল ধ্বংস করে দেয়। তাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত কুফরী থেকে দূরে থাকা, ঈমানকে হিফাজত করা এবং আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা।
কুরআন ও হাদীসে কুফরীর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং কুফরী অবস্থায় মারা যায়, তাদের উপর আল্লাহ্, ফেরেশতাগণ এবং সমস্ত মানুষের অভিশাপ। তারা তাতে চিরকাল থাকবে, তাদের শাস্তি কখনো লঘু হবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেওয়া হবে না।
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং নিজেদের আমলগুলো বিনষ্ট করো না। আল্লাহ আমাদের সকলকে কুফরী ও শিরকের অন্ধকার থেকে হিফাজত করুন।
0 মন্তব্যসমূহ