ডক্টর মরিস বুকাইলি (১৯২০-১৯৯৮) একজন ফরাসি চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী ছিলেন, যিনি পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি ফ্রান্সের একজন খ্যাতনামা সার্জন ছিলেন এবং বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সমন্বয় নিয়ে গভীর গবেষণা করেছিলেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের পেছনে মূল কারণ ছিল কুরআনের বৈজ্ঞানিক সত্যতা। তিনি দেখেছিলেন যে কুরআনে বর্ণিত অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা তাঁর বিশ্বাসকে আমূল বদলে দেয়।
মরিস বুকাইলি ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিল কুরআনের বৈজ্ঞানিক অলৌকিকতা। তিনি যখন মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের অনুরোধে কুরআন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন, তখন তিনি লক্ষ্য করেন যে কুরআনে এমন অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে যা ১৪০০ বছর আগে মানুষের জানার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না।
আরও পড়ুন : সূরা আল আন আমের ফজিলত
কুরআনে মানুষের ভ্রূণ বিকাশের পর্যায়গুলো সূক্ষ্মভাবে বর্ণনা করা হয়েছে (সূরা আল-মুমিনুন, ২৩:১২-১৪), যা আধুনিক এমব্রায়োলজির সাথে সম্পূর্ণ মিলে যায়। কুরআনে বলা হয়েছে, পর্বতগুলো পৃথিবীর জন্য "পেরেক"-এর মতো কাজ করে (সূরা আন-নাবা, ৭৮:৬-৭), যা পরবর্তীতে টেকটোনিক প্লেট তত্ত্ব দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
আর পড়ুন : রাসূলের সকালের আমল ও দোয়া
কুরআনে দুটি সমুদ্রের মিলনস্থলে একটি অদৃশ্য প্রাচীরের কথা বলা হয়েছে (সূরা আর-রহমান, ৫৫:১৯-২০), যা লবণাক্ত ও মিষ্টি পানির মিশ্রণে দেখা যায়। এইসব তথ্য মরিস বুকাইলিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এগুলো কেবল ঐশ্বরিক জ্ঞান থেকেই আসতে পারে।
আরও পড়ুন : এক বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে তিন বন্ধুর বাসর
মরিস বুকাইলি বাইবেল ও কুরআনের মধ্যে একটি তুলনামূলক গবেষণা করেন। তিনি দেখেন যে বাইবেলে অনেক বৈজ্ঞানিক ভুল রয়েছে, যেমন পৃথিবী সমতল বলে উল্লেখ করা (যা পরে ভুল প্রমাণিত হয়েছে), অন্যদিকে কুরআনে কোনো বৈজ্ঞানিক অসঙ্গতি নেই। এই তুলনা তাঁকে কুরআনের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত করে।
মরিস বুকাইলি বিশ্বাস করতেন যে মুহাম্মাদ (সা.) একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন, যাঁর পক্ষে এত সঠিক বৈজ্ঞানিক তথ্য জানা অসম্ভব ছিল, যদি না তা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যাদেশ হয়ে থাকে। এই যুক্তি তাঁকে ইসলামের সত্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করে।
বিজ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও মরিস বুকাইলি আধ্যাত্মিক সত্যের সন্ধান করছিলেন। তিনি দেখেছিলেন যে ইসলাম শুধু ধর্ম নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা বিজ্ঞান, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।
তাঁর গবেষণার ফলাফল তিনি লিপিবদ্ধ করেন বিখ্যাত বই The Bible, The Quran and Science। এই বইয়ে তিনি প্রমাণ করেন যে কুরআনের বৈজ্ঞানিক বর্ণনাগুলো আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ, যা কুরআনের ঐশ্বরিক উৎসের প্রমাণ দেয়।
মরিস বুকাইলির ইসলাম গ্রহণের মূল কারণ ছিল কুরআনের অলৌকিক বৈজ্ঞানিক সত্য। তিনি প্রমাণ পেয়েছিলেন যে কুরআন কোনো মানুষের রচনা নয়, বরং আল্লাহর বাণী। তাঁর এই যাত্রা শুধু একজন ব্যক্তির ধর্মান্তরিত হওয়ার গল্প নয়, বরং বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে এক অপূর্ব সমন্বয়ের দলিল। আজও তাঁর গবেষণা বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষকে ইসলামের সত্যতা উপলব্ধি করতে সাহায্য করছে।
0 মন্তব্যসমূহ