Comment

হযরত সালেহ (আঃ) এর জাতি ধ্বংসের কাহিনি


সামুদ জাতি অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ছিল। কিন্ত হতভাগা এই জাতি মূর্তি পূজা ও ডাকাতিতে লিপ্ত ছিল। তাই আল্লাহ হযরত সালেহ (আঃ)-কে তাদের কাছে নবী হিসেবে প্রেরণ করলেন।

কিন্তু তাঁর কওমের লোকজন তাঁর দাওয়াতের বিরক্ত হলো। তাদের নেতৃস্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি জনতার সামনে হযরত সালেহ (আঃ) কে বললো- ‘সত্যিই যদি তুমি আল্লাহর প্রেরিত নবী হও, তাহলে এই ব্যাপারে কোনো মুজেযা বা নিদর্শন দেখাও। এতে আমরা তোমার সত্যতায় বিশ্বাস করবো’।

আরো পড়ুন : আল্লাহর পক্ষে রাজত্ হাসিলের দোয়া 

হযরত সালেহ (আঃ) তাদের সাবধান করে দিয়ে বললেন- ‘এমন যেন না হয় যে, নিদর্শন দেখার পরও তোমরা ভুল মতবাদ ও ধর্ম বিশ্বাসের উপর অনড় থাকো’। নেতৃবর্গ তখন জোরালোভাবে বললো- ‘না, আমরা তা দেখা মাত্রই ঈমান আনবো।


তখন হযরত সালেহ (আঃ) জানতে চাইলেন- ‘তোমরা কোন ধরনের নিদর্শন চাও’? তারা ভাবলো এমন কিছু বলতে হবে, যা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই তারা জবাবে বললো- ‘সামনের পাথর থেকে একটি গর্ভবতী উষ্ট্রী বের করে দেখাও, উষ্ট্রীটি বের হওয়ার পর পরই সবার সামনে বাচ্চা প্রসব করবে।


আপাত দৃষ্টিতে যদিও তা অসম্ভব, কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই। হযরত সালেহ (আঃ) আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে দোয়া করলেন। ফলে তখনই পাথর থেকে একটি গর্ভবতী উষ্ট্রী বেরিয়ে এলো এবং সাথে সাথে একটি বাচ্চা প্রসব করলো। 


আরো পড়ুন : কুরআনে ধৈর্য ও সফলতা বর্ণনা


তাদের নেতৃবর্গের মধ্য হতে জুনদা ইবনে উমর তখনই ঈমান গ্রহণ আনলেন। আর অন্যান্যরাও যখন তাঁর অনুকরণে ঈমান আনবে, এমন সময় তাদের ঠাকুর ও পুরোহিতরা তাদেরকে নানা কথা বলে ঈমান আনা থেকে বিরত রাখলো।


হযরত সালেহ (আঃ) বললেন- ‘দেখো! তোমাদের কামনা মতেই এই উষ্ট্রী প্রেরিত হয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালার সিদ্ধান্ত এই যে, এর জন্য পানি পানের পালা নির্দিষ্ট থাকবে। একদিন এই উষ্ট্রী, আরেক দিন অন্য সকল লোকজনের ও তাদের পালিত পশুর জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। আর সা*বধা*ন! এর যেন কোনরূপ কষ্ট না হয়। এর যদি কোনোরূপ কষ্ট হয় তাহলে তোমাদের কোনো নিস্তার নেই।


বেশ কিছু দিন পর্যন্ত এই ধারা বহাল ছিলো। বহু লোক উষ্ট্রীর দুধ দ্বারা উপকৃত হতো। তবে ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে এই বিষয়টি অসহনীয় হয়ে উঠে।


পরে সামূদ নামক জনৈক সুন্দরী রমনী নিজেকে ‘মিসদা’ নামক ব্যক্তির সামনে এবং অপর রমনী উনায়যা তার সুন্দরী কন্যাকে কায়দার নামক ব্যক্তির সামনে এ কথা পেশ করলো যে- ‘তারা যদি উক্ত উষ্ট্রীকে মে*রে ফেলতে পারে, তাহলে এরা তাদের মালিকানাধীন হয়ে যাবে। তাদেরকে বিবাহ করে আনন্দ উপভোগ করবে’।


তাদের এই উত্তেজনাকর প্রস্তাবে কায়দার ও মিসদা উদ্ধুদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নিল যে, উষ্ট্রীর চলাচল পথে লুকিয়ে বসে থাকবে। উষ্ট্রীটি যখন মাঠের দিকে যাওয়ার জন্য বের হবে, তখন তার উপর আক্রমণ করবে।


পরিকল্পনা মতো তারা উষ্ট্রীকে মেরে ফেললো। উষ্ট্রীকে মারার পর তার বাচ্চাটি পালিয়ে পাহাড়ে উঠে চিৎকার করতে করতে এক পর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো!


হযরত সালেহ (আঃ) এই বিষয়ে অবগত হয়ে বললেন- ‘আমি যা আশঙ্কা করছিলাম, তাই হলো। এখন তোমরা আল্লাহর আজাবের অপেক্ষা করো। তিনদিনের মধ্যে আল্লাহর আজাব এসে তোমাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে’।


আল্লাহ জিব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে বিশাল একটি আওয়াজ দিলেন। এই আওয়াজে পুরো সামুদ জাতি এমনভাবে ধ্বংস হলো যে, তাদের কোনো চিহ্ন বা অস্তিত্বই পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ